২৬ই মার্চ, ২০২০
সন্ধ্যা: ৭.০৩ মিনিট
বহু বহু দূরে একটি নব নির্মিত বাড়ির ছাঁদে দুজন দাড়িয়ে আছে। তাদেরকে
দেয়াশালাই এর দুটো কাঠির মত মনে হচ্ছে। ছাঁদের এক পাশে পিলারের রড গুলো বের হয়ে
আছে। অন্য পাশে চিলে কোঠায় দাড়িয়ে তারা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
অপেক্ষাকৃত কম দূরের একটা বিল্ডিং এর ছাঁদে পানির টাংকিতে দুজন বসে
আছে। তাদের সামনে অনেকটা খোলা জায়গা। তারা হয়ত দুই বন্ধু। পড়ন্ত বিকালে ছাঁদে বসে
দুইজন আড্ডা দিচ্ছে।
তাদের পাশেই অন্য একটা বিল্ডিং এর চতুর্থ তালার বেলকনিতে আরও দুজন। এক
বাবা তার ছোট্ট সন্তানকে বুকে নিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। হয়ত সন্তানের সামনের
দিনগুলা কেমন কাটবে তা নিয়ে ভাবছে। সে দাড়িয়ে আছে অনেক অনেকক্ষন ধরে।
আমি আগে কখনো খেয়াল করিনি, একটু দূরে একটি বাসার ছাঁদে বাংলাদেশের
পতাকা উড়ছে। এটা কি আগেরই ছিল, নাকি আজ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে উড়িয়েছে?
একটা বাসার ছাঁদ বেশ বড়। অনেক বড়। দুই-তিন তলা দালানের উপর ছাঁদটা। ওই
ছাঁদটায় সবচেয়ে বেশি মানুষজন। অনেকগুলা পিচ্চি। ওরা খেলছে, দৌড়াচ্ছে, ঘুড়ি
উড়াচ্ছে। জায়গাটা একটা বড় মাঠের মত। ওখানে যারা খেলা করছে, তারা সবাই হয়ত ওই বাসার
ছেলে মেয়ে না। পাশের বাসার থেকে ওদের সাথে খেলতে আসছে তাদের সঙ্গী সাথীরা। এই
গাড়ি-ঘোড়া আর বড় বড় দালান-কোঠার শহরে একটু খোলা জায়গা কই? একটা খেলার মাঠ
কোথায় মিলে?
আশেপাশের কয়েকটা বিল্ডিং বেশ চকচকে। নতুন রঙ করা। বেশ উচু উচু। দশ-বার
তলা। প্রায়গুলো বিল্ডিং এর জানালার কার্নিসে এসি সেট করা। আবার কয়েকটা বেশ
পুরুনো বিল্ডিং। রঙ উঠে গেছে। অবহেলা অযত্নে ছাদের গাছ গুলো ঝোপঝাড়ে পরিনত
হচ্ছে। আছে কয়েকটা নতুন বিল্ডিং, শুধু মাত্র ছাঁদ গুলো তুলে দিয়েছে। ভেতরটা এখনো
পুরুপুরি ফাঁপা, ফাকা হয়ে আছে।
বাসার সামনের রাস্তাটা আজ বড়ই নিরব। অনেকক্ষন পরে পরে দুই একটা সাইকেল
বা রিকশা যাচ্ছে। অথচ এই রাস্তাটা অত্যন্ত ব্যস্ত। রাত দুইটা-চারটা পযর্ন্ত ভারী
ট্রাক চলে।
আজ প্রায় অনেকগুলা বাসার ছাঁদেই বেশ কিছু মানুষ জন। কেউ গল্প করছে,
কেউ আশেপাশে দেখছে, আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। পিচ্চি বাচ্চারা খেলাধুলা করছে। তারা
কি প্রতিদিনই বিকালে বাসার ছাঁদে আসে? না আমার মত কোন এক বন্ধের দিনে, অবসর বিকালে
সময় কাটাচ্ছে?
মসজিদ থেকে আযান এর সুর ভেসে আসছে। বহু দূরের ওই দুটো লোক এখনো
দাড়িয়ে আছে। কাছের বিল্ডিং এর ছেলে দুটো এখনো বসে। বাবা তার সন্তানকে নিয়ে ঘরে
চলে গেছে। বাচ্চারা তাদের মায়ের ডাকে, অনিচ্ছায় খেলার মাঠ ছেড়ে যাচ্ছে। আমার সামনে
দিয়ে ৯ টা পাখি উড়ে গেল। হয়ত তাদের নীড়ে ফিরছে।
আমি এই সুন্দর দৃশ্যটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। যেন কখনো
চোখ বন্ধ করলেই পুরো দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। কিন্তু আমি জানি দৃশ্যটা
থাকবে না। আমি কথনো কারো চেহারাও পুরোপুরি মাথায় ধরে রাখতে পারি না। সুন্দর
কোন দৃশ্য, সুখকর কোন স্মৃতিও না।
আমার শুধু ঘটনাটা মনে থাকে। ওখানে, এর সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম। তার সাথে
দেখা হয়েছিল, কথা হয়েছিল। হয়ত ভালো একটা সময় কাটিয়েছিলাম। কিন্তু সেই দৃশ্যটা
কল্পনা করতে পারি না। মাথায়
আসে না। স্বপ্নের মত আবছা আবছা লাগে সব কিছু। মাথাটা পুরো খালি হয়ে যায়। মনের ভিতরটা হাঁ হাঁ
করে, চিত্রটা আকাঁর জন্য।
থাক আজকের মত।
শুভ সন্ধ্যা প্রকৃতি, শুভ সন্ধ্যা।
No comments:
Post a Comment